পাঁচমিশালি
- Details
( শ্রীমতী নবনীতা দেবসেনের সান্নিধ্যে আসার সুযোগ ঘটেছিল হঠাৎ -ই, কাজের সূত্রে। মাত্র তিন বছর আমি নবনীতাদিকে অল্প কাছ থেকে জানার সময় বা সুযোগ পেয়েছি। এই লেখাটি ভালো-বাসা বাড়ির নবনীতাদিকে নিয়ে আমার স্মৃতিভান্ডারের খানিক অংশ, বিদুষী নবনীতা দেবসেনের কর্মকান্ডের আলোচনা বা সাহিত্যকর্মের মূল্যায়ন নয়। আজ ৭ নভেম্বর।)
- Details
চন্দননগরের কৃষ্ণপট্টী শেঠ লেনে আমাদের বাড়ির উল্টোদিকে ছিল সন্টুদাদা-মন্টুদাদাদের বাড়ি। সে বাড়িটা আমাদের একটেরে ,লম্বাটে, বাড়ির থেকে একেবারেই আলাদা দেখতে।দোতলা বাড়ি, সামনে পেছনে বাগান,বাগানে ঢোকার বড় গেট, বাগানের লোহার রেলিং এর বাইরে বাঁধানো লম্বা বসার রোয়াক। সেই রোয়াকে বিকেলবেলা সাদা ধুতি -পাঞ্জাবি পরে গিয়ে বসতেন আমার দাদু। সঙ্গে বসতেন ওই বাড়ির কর্তা - তাঁকেও আমরা দাদুই বলতাম। তখন নাম জানতাম না, আমার কাছে উনি সন্টু-মন্টু দাদাদের দাদু
- Details
গতকাল( কাগজে কলমে গত পরশু অর্থাৎ ২ রা সেপ্টেম্বর ২০১৯) অনেক অনেক দিন পরে, হঠাৎ করে রাত পৌনে বারোটার নাগাদ লোডশেডিং হল। হ্যাঁ, আমরা তো লোডশেডিং-ই বলি। ছোটবেলার অভ্যাস। তখন সারাদিনে কয়েকবার বিদ্যুৎ চলে যাওয়া এবং আসাটা নিয়ম ছিল।আর সেই আসা-যাওয়ার গল্পের ‘এক- কথায়- প্রকাশ- করো’ নাম ছিল ‘লোডশেডিং’ । বেশ কিছুবার এমনও গেছে যখন দিন দুয়েক টানা বিদ্যুৎ সংযোগ থাকেনি। না, সেই সময়ে ঝড়-বৃষ্টি-সাইক্লোন-বন্যা কিছুই হয়নি। তবুও আমরা সেই পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছি। পরে কলকাতা শহরে এসেও লোডশেডিং -এর মুখোমুখি হয়েছি কয়েকবার।
- Details
- Details
(এই গদ্যটি আমার লেখার কথা নয়, দরকার ও ছিল না। একজন কিঞ্চিৎ দাবী জানালো বলে, ভাবলাম লিখি। এই গদ্যের শিরোনাম হতে পারে 'একটা শাড়ির গল্প', কিংবা 'কয়েকটা রঙের গল্প'; কিংবা 'কয়েকটা ছেঁড়া ছেঁড়া ভাবনা'। নাহলেও ক্ষতি নেই। সব কিছুই যে নিয়ম মেনে হতে নেই, সে আর কে না জানে?)
- Details
কলকেতা শহরে বর্ষা নাকি এসে গেছে, কিংবা আসছে, কিংবা এল বলে ! আবহাওয়া অফিস নাকি তেমনই বলেছিল । এমনিতে অবশ্য বোঝার উপায় নাই, জ্যৈষ্ঠের এই শেষ কয়দিন এক্কেরে ঠেসে ধরে নিঃশ্বাস বের করে নেওয়ার উপক্রম হয়েছে। সেই হারিয়ে যাওয়া ছোটবেলায়, বর্ষা এসে গেছে ব্যাপারটা বেশ বুঝতে পারতাম, যখন একদিন সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে দেখতাম সারা আকাশ কীরকম হালকা ছাই ছাই রঙের জলে ভরা ভরা মেঘে ছেয়ে গেছে; বাতাসে সোঁদা গন্ধ; ভেজা ভেজা ভাব চারদিকে; গাছপালার পাতাগুলোর ওপর থেকে লাল ধুলোর পরত ধুয়ে গিয়ে কেমন চকচকে নানা মাত্রার সবুজ দেখা যাচ্ছে। আজকের ধোঁয়া- ধুলোয় ভরা কলকাতায় সেরকম দৃশ্য যদি কোনোওবছরে হঠাৎ করে একদিন দেখতে পাই, তাহলে ধরে নিই ওটা ভুল করে হয়ে গেছে ! কলকাতার বর্ষা নিয়ে আমার কোনোও রোমান্টিসজম নেই।
- Details
বহুদিন পর ঝড় বৃষ্টির কারণে, বেশ দেরী করে, মওকাবাজ অটোচালককে স্বাভাবিকের দ্বিগুনের বেশি ভাড়া দিয়ে বাড়ি ফিরলাম। পাড়ার সব দোকানপাটই তখন প্রায় বন্ধ। একটি সদ্য প্রতিষ্ঠিত ঝাঁচকচককে দোকানে ঝলমলে আলোর নিচে দুই বিশাল লাল কাপড় ঢাকা হাঁড়ি, আর হাঁড়িদুটির পেছনে অনুরূপ মুখে দুটি মানুষ...অবশ্যই অনন্তের অপেক্ষায় বসে! বাঙালির ন্যাশনাল ফুডের গন্ধের সাথে মিলে মিশে গেছে সোঁদা বাতাসের সুবাস। পাড়ার সব্জিবিক্রেতা ছেলেটির ভ্যানের ওপর সদ্যস্নাত কলমী, নটে, পুঁই, পাট এলিয়ে পড়ে হ্যালোজেনের চড়া আলোয় চকচকে শরীর শুকোচ্ছে।
- Details
হেঁটমুন্ড বাদুরের মত মিলের রংচঙে ফুল-ছাপ-তোলা প্রত্যঙ্গবিহীন নিস্পৃহ রাতপোষাকগুলি হাওয়ায় দোলে;
প্রাচীন এবং দুর্মূল্য আইভরির মত হলদেটে অন্তর্বাস, ফ্যাকাসে গামছার আড়ালে নিভৃতি খোঁজে;
- Details
পুজোর স্মৃতি নিয়ে লিখতে বা কথা বলতে বসলে অবশ্যই ফিরে ফিরে আসবে নানা রং-গন্ধ-বর্ণ-স্বাদের স্মৃতি। ছুটিতে বেড়ানো, ফ্যাশন, সাজসজ্জা, আত্মীয়বন্ধুদের গপ্পোর সাথে সাথে অবশ্যই আসবে খাওয়া-দাওয়ার কথা, এ আর এমন কি? আমাদের প্রত্যেকেরই ফেলে আসা দিনের পুজোর স্মৃতির সাথে জড়িয়ে আছে এইরকম নানা ধরণের স্মৃতি। আমারও আছে; তার মধ্যে খাবার-দাবারের স্মৃতি বেশ ভালই জায়গা নিয়ে আছে, কারণ সেগুলির সাথে জড়িয়ে আছে আরো নানা টুকরো আনন্দ আর মন-কেমন করা স্মৃতি।
- Details
অবশেষে সেইদিন আসন্ন। আজ, শনিবার, ৩০শে এপ্রিল, পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের শেষ দফায় ভোটের দিন। কাজের মেয়ে দুইদিনের ( আসলে চারদিনের )ছুটি নিয়েছে।
আবাসনের ঝাড়ুদার 'মেসো'-ও বলেছে দুইদিন আসবে না। আর কে কে আজ আগামি কাল আর পরশু আসবে না কে জানে ! বৃষ্টি যে আসবে না সেটাই মনে হয় একমাত্র নিশ্চিত আছে। বেশ একটা ছুটি ছুটি ভাব। মাংস এবং মদের দোকানে গত দিন কয়েক বেজায় বিক্রিবাটা। এদিক সেদিক লাল-নীল-কমলা-সবুজ-সাদা নানারঙের কাপড়ে মোড়া ছোট ছোট বুথ। রঙিন পতাকা।সকাল থেকে চারিদিক কি অসম্ভব নিস্তব্ধ। রাস্তায় গাড়ি ঘোড়া নেই। লোকজন ও অনেক কম। দোকান বাজার বন্ধ। এদিক সেদিক মাঝেমধ্যে হালকা করে টিভির আওয়াজ শুধু।
হাল্লা চলেছে যুদ্ধে।
কিন্তু আমার বড় সমস্যা। কেন, সেটাই সবিস্তারে বলা দরকার।
- Details
আমার কাছে আজকাল আর চিঠি আসেনা। চিঠি মানে কাগজে লেখা চিঠি। যে চিঠি নিয়ে আসার কথা ডাকপিওনের। ডাকে আসে শুধু ইলেকট্রিক বিল, টেলিফোন বিল, ক্রেডিট কার্ড বিল, ফর্ম, অ্যাপ্লিকেশন এইসব। কালে-কস্মিনে এক দুটো বিয়ে বাড়ির নিমন্ত্রনের চিঠি। শুধু আমার কাছে কেন, কারোর কাছেই মনে হয় আসেনা। জীবন থেকে ক্রিম রঙা পোস্টকার্ড আর নীল রঙা ইনল্যান্ড কাগজ হারিয়ে গেছে। রঙিন ফুল ছাপ রাইটিং প্যাড আর লাল হৃদয়-চিহ্ন আঁকা রংচঙে খাম কিনিনি বহুদিন। আমিও কাউকে চিঠি লিখিনা। আমাকেও কেউ চিঠি লেখে না।
- Details
গতকাল , ২৪শে এপ্রিল, ২০১৫ সন্ধ্যাবেলায় সায়েন্স সিটি অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত সুথল পথিকৃৎ সম্মান ২০১৫ এর অনুষ্ঠান দেখার সুযোগ হয়েছিল। বোরোলিন, সুথল এবং আরো অন্যান্য নিত্যব্যবহার্য সামগ্রী প্রস্তুতকারি সংস্থা জি ডি ফার্মাসিউটিক্যাল্স্ এর এই উদ্যোগের পিছনে উদ্দেশ্য- আমাদের এই আপাত বিপর্যস্ত সমাজের মধ্যে থেকেই যে সব মানুষ সবার চোখের আড়ালে, মানুষের সার্বিক উন্নতির পথে নিরলস কাজ করে চলেছেন, তাঁদের সম্মানিত করা, এবং পাদপ্রদীপের আলোয় নিয়ে আসা-আরো একবার। গতকালের অনুষ্ঠানে সম্মানিত করা হল তিনজন এমনই মানুষকে
- Details
গতকাল দুপুরে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলে গেছিলাম , সেখানে গত মাসখানেক ধরে চলছিল অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আঁকা ছবির এক প্রদর্শনী। প্রদর্শনীটি এই সপ্তাহেই শেষ অবশ্য। ওবিন ঠাকুর, ছবি কেমন করে লিখতেন দেখার সুযোগ পেলাম। আমি শিল্প বিশেষজ্ঞ নই, তাঁর শিল্পকর্ম বিষয়ে খুব কিছু পড়াশোনাও নেই। যেটুকু বুঝলাম, নানা ধরণের মাধ্যমে, বিশেষতঃ, জল রঙে তাঁর অবাধ স্বাচ্ছন্দ্য ছিল, এবং নানা ধরণের ছবি আঁকার শৈলী তিনি বিভিন্ন সময়ে প্রয়োগ করেছিলেন।
- Details
আজ কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো। দুপুরবেলা টিভিতে একটি সংবাদ চ্যানেলে এক সেলেব্রিটির বাড়িতে লক্ষ্মীপুজোর ব্যবস্থাপনা নিয়ে বাইট দিচ্ছিল। অভিনেত্রী লাল পেড়ে শাড়ি এবং প্রচুর সোনার গয়না পরে আলপনা দিচ্ছেন, এবং রাতে বাড়ির পুজোর ভোগের ফিরিস্তি দিচ্ছেন। দেখতে দেখতে ভাই বলল - আজকাল কি সবকিছু নিয়েই প্রবল হইচই হয়...এই দুর্গাপুজো গেল...আগে দুর্গাপুজোর পরে কিরকম মন খারাপ হয়ে থাকত কতদিন, আজকাল কি মন খারাপও করেনা কারোর...?
- Details
প্রত্যেক বছর ১৫ই আগস্ট স্বাধীনতা দিবস পালন করা হয়। সোমবার বা শুক্রবারে পড়লে কেউ কেউ উইক-এন্ডের সাথে জুড়ে নিয়ে ছোটখাট ট্রিপ মেরে আসেন। কেউ কেউ সকাল সকাল মাংস কিনে বাড়ি ফেরেন। কোন কোন স্কুলে পতাকা উত্তোলন হয়, প্যারেড হয়। কারোর কারোর ছুটি থাকে। আমাদের স্কুলের প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপন খুব ভাল করে মনে আছে, কিন্তু স্বাধীনতা দিবসে কি হত ভুলে গেছি। স্কুলে যেতে হত বোধ হয়। কেন এত তাড়াতাড়ি এই তথ্য ভুলে গেলাম কে জানে।
- Details
মহালয়ার ভোরবেলা অ্যালার্ম বাজিয়ে চারটের সময় ঘুম থেকে উঠে, ধূপ জ্বালিয়ে, ল্যাপটপ খুলে মহিষাসুরমর্দিনীর সিডি চালিয়ে দিলাম। প্রত্যেক বছরের মতই ভাবলাম, এইবার পুরো অনুষ্ঠান শুরু থেকে শেষ অবধি শুনবো। আমার সিডি টা ভিডিও সিডি। তাতে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের গলায় যখন উদাত্ত স্বরে শোনা যায় "যা দেবি সর্ব্বভূতেষূ --- " তখন স্ক্রিনের ওপর পাটের চুল দাড়ি লাগানো বরষীয়ান অভিনেতা মনু মুখার্জীকে দেখা যায় চট দিয়ে তৈরি স্টুডিওর কুঁড়ে ঘরে বসে সেই বজ্রগম্ভীর কন্ঠের লিপ দিচ্ছেন। মাঝে মাঝে নীল আকাশ, কাশ ফুল, দুর্গার মুখ, নৃত্যরতা মহিলা, লালপেড়ে শাড়ী পরা বাঙালিনী --- আমার ভালো লাগে না। কিরকম যেন মনে হয় একটা অপার্থিব ঘটনাকে জোর করে টেনে নামিয়ে আনা হচ্ছে। 'মহিসাষুরমর্দিনী' দেখার নয়, শোনার, অনুভব করার ---অন্ধকার ঘরে বালিশ আঁকড়ে বিছানায় শুয়ে নিজের অজান্তেই রোমাঞ্চিত হওয়ার --- এক বিশেষ অভিজ্ঞতা।