সন্ধ্যেবেলা বাজার করে ফিরছিলাম। বাড়ির কাছাকাছি কয়েকটা খুদে ঘিরে ধরল।
"সস্সোতি পুজো করব, চাঁদা দাও না"
"আমাদের হাউজিং -এই তো পুজো হচ্ছে, সেখানে চাঁদা দিয়ে দিয়েছি, আর দেব না..." - কাটানোর চেষ্টা করে বললাম
"আমাদের দাও না, চাঁদা দাও না"
"কোথায় পুজো হবে তোদের?"
"এই তো পেছনের রাস্তায়...দাও না কাকিমা"
"সরস্বতী পুজো তো শুরু হয়ে গেছে, তোরা এখনো চাঁদা তুলছিস?"
"আমরা আজকে মানছি না, কালকে মানব...দাও না চাঁদা, টাকা নেই বলে ঠাকুর তুলতে পারছি না..."
"হুম, কোন ক্লাসে পড়িস?"
"ক্লাস টু..."
"এখন ঠাকুর কিনবি, তবে পুজো...তো কালকে কি খাবি?"
"ফায়েডাইস..."
"অ্যাঁ...ঠাকুর কেনার টাকা নেই, এদিকে কি খাবি সেটা ঠিক?"
"হ্যাঁ, ফায়েডাইস - আলুদম..."
"আচ্ছা , নে..."
(দশ টাকা প্রদান ও হাসি হাসি মুখে গৃহাভিমুখে গমন)
একটা বাড়তি কথা। কুচেগুলো আমাকে 'কাকিমা' বলাতে শুরুতে কয়েক মূহুর্ত বিরক্তি এলেও কিছু বলিনি। আমার বয়সী যাবতীয় স্থূলাঙ্গী মহিলাই ওদের কাছে ডিফল্ট কাকিমা। যেমন বাজারে, যারা এক দুজন আলাদা করে একটু বেশি চেনে, তারা বাদে সবার জন্য আমাদের মত মহিলারা ডিফল্ট বৌদি। ওগুলো নিয়ে মাথা ঘামানো ছেড়ে দিয়েছি। কিন্তু মুশকিল হল "বেশি শিক্ষিত" ব্যাঙ্ক, জীবনবীমা, ও অন্যান্য পরিষেবামূলক সংস্থায় কাজ করা কর্মী এবং টেলি কলারদের নিয়ে।
এই সব আকাট শিক্ষিত কর্মী এবং টেলিকলারদের কাছে পৃথিবীর যাবতীয় প্রাপ্তবয়স্ক মহিলা শুধুই বিবাহিত; তাছাড়া তারা কেউই নিজেরা রোজগার ও করেনা। যদিও বা করে, বাড়ির টাকাপয়সার দিকটা বাড়ির "স্যার"-এরাই একমাত্র করে থাকেন।
এরা পাঁচশো বত্রিশবার বল্লেও, যাবতীয় কাগজপত্রে নামের আগে 'মিসেস' লিখবে, আর ফোন করে বলবে, - মিসেস রায় বলছেন? ম্যাডাম, স্যার কি বাড়ি আছেন? একটু ডিস্কাশন ছিল...
এর পরেও যে আমি এদের সাথে আরো দুটো কথা অতি ভদ্রভাবে বলে থাকি, সেটা আমার চরম ধৈর্য্যের নিদর্শন, ওদের কোন প্রফেশন্যাল ক্যাপাসিটি নয়। তবে কিনা এদেরকে পুরোপুরি দোষ দিয়েও লাভ নেই, যারা এদেরকে বড় বড় ঠাণ্ডা ঘরে বসে প্রশিক্ষণ দেয় তারা আরো বড় গন্ডমূর্খ।
এই যাবতীয় মূর্খগুলি লক্ষ্মীর ইশ্কুল থেকে তো যেভাবে হোক পাশ করে বেরিয়েছে; কিন্তু সবকটাকে মানুষ করতে পারেন একমাত্র সরস্বতীই।
[ এই পোস্ট এর শেষাংশ কাউকে সরস্বতী পুজোর বাসন্তী বাজারে দুঃখী করার জন্য লেখা হল না। কোন ব্যক্তিগত আক্রমণ ও নয়। বরং মাঝে মাঝেই ফোন মারফত আক্রান্ত হতে হতে অবশেষে অল্প একটু তিরস্কার।
যাঁরা ঠাণ্ডা ঘরে এহেন প্রশিক্ষণের সাথে যুক্ত, তাঁরা গন্ডমূর্খ বলেছি বলে যদি খুব রেগে গিয়ে থাকেন, তাহলে বোঝার চেষ্টা করুন, সমস্যাটা একটা সামাজিক মানসিকতার গোলমাল, যেটা বুঝতে হলে এবং সমাধান করতে হলে ঠাণ্ডা ঘরের বাসি পাওয়ারপয়েন্ট স্লাইডশো থেকে স্লাইড করে বেরিয়ে আসতে হবে। বাস্তব জীবনের দুর্গা, কালী, জগদ্ধাত্রী, লক্ষ্মী এবং সরস্বতীদের সাথে মোলাকাত করুন। বুঝুন এবং নিজেদের কর্মীদের বোঝাতে শিখুন, পৃথিবীর সমস্ত প্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের পরিচিতি এবং জীবনযুদ্ধ কতগুলো সমাজসৃষ্ট বিবাহ-চিহ্ন, পদবী পরিবর্তন ও স্যালুটেশন/ সম্বোধনের ওপর নির্ভর করে না। ]
Facebook Link: https://www.facebook.com/mahasweta.ray/posts/10154059946717494