সহৃদয়তা সত্যিই কী সেটা জানার আগে
তোমাকে কিছু হারাতে হবে,
অনুভব করতে হবে ভবিষ্যতের বিলীন হয়ে যাওয়া
ঠিক যেমন নুন মিশে যায় পাতলা ঝোলে।
হাতে ধরা ছিল যা কিছু
যেটুকু তুমি গুণেগেঁথে জমিয়েছিলে,
সেইসব হারাতে হবে যাতে তুমি বোঝো
সহৃদয়তার এলাকাগুলির মাঝে
কতটা নিঃসঙ্গ হতে পারে পথ প্রান্তর ।
কেমন তুমি চলতেই থাকো
আর ভাবতে থাকো যে বাসটা কখনও থামবে না,
শুকনো খাবার খেতে থাকা যাত্রীরা
জানলার বাইরে চেয়ে থাকবে অনন্তকাল।
সহৃদয়তার কোমল গুরুত্ব বোঝার আগে,
তোমাকে বেড়াতে যেতে হবে যেখানে সেই সাদা চাদর জড়ানো আদিবাসী
মরে পড়ে আছে পথের ধারে।
তোমাকে বুঝতে হবে এটা তোমার সঙ্গেও হতে পারত,
বুঝতে হবে সেও ছিল একজন
যে রাতভর সফর করছিল, নিয়ে অনেক পরিকল্পনা
আর সাদামাটা শ্বাস যার ভরসায় সে বেঁচে ছিল।
সহৃদয়তা যে মর্মমূলের গভীরে অবস্থিত
তা বোঝার আগে
তোমাকে অনুভব করতে হবে বিষাদেরও গভীরতা।
বিষাদের মাঝে জেগে উঠতে হবে তোমায়
তার সঙ্গে কথা বলতে হবে যতক্ষণ না তোমার বক্তব্যে
ধরা পড়ে বিষাদের যোগসূত্র
আর তুমি দেখতে পাও তার ব্যাপ্তি।
আর তখন, শুধুমাত্র সহৃদয়তাই একমাত্র বোধগম্য হয়,
শুধুমাত্র সহৃদয়তা, যে তোমার জুতোর ফিতে বেঁধে দেয়
আর তোমাকে পাঠায় ডাকে চিঠি ফেলতে আর
রুটি কিনতে,
শুধুমাত্র সহৃদয়তা, যে দুনিয়ার ভীড়ের মাঝে
মাথা তুলে তোমাকে বলে,
তুমি আসলে আমাকেই খুঁজছিলে
আর তারপরে তোমাকে সঙ্গ দেয় সর্বত্র
ছায়া কিংবা বন্ধুর মত।
নাওমি শিহাব নাই -এর কবিতা 'Kindness' পড়ে ফেলেছিলাম হঠাৎই। কবিতাটি সম্ভবত লেখা হয়েছিল ১৯৭৮ সালে, আর প্রকাশিত হয় ১৯৮০ সালে।কবিতাটার শেষ স্তবকটাই আসলে মন কেড়েছিল — যদিও আজকাল আর কেউ ডাকে চিঠি ফেলতে যায় না। গদ্যের তুলনায় কবিতার অনুবাদ বেশ কঠিন মনে হয় আমার, তবুও অনুবাদ করলাম, ওই শেষ স্তবকটার জন্য।এই আগুন জ্বলা, যুদ্ধের দামামা বাজা, ধ্বংসের নিরন্তর জয়ধ্বনি ওঠা সময়ে , শুখা মাটির পরোয়া না করে গজিয়ে ওঠা নতুন চারার মত — আমাদের একে অপরের জন্য বেড়ে উঠুক এবং বজায় থাক — সহৃদয়তা ।