বেশ কয়েকদিন ধরেই ভাবছি কিছু বিষয় নিয়ে লিখব। কিন্তু গত আট-দশ দিনের ঘটনার ঘনঘটায় সেটা আর হয়ে উঠছিল না। কিন্তু আর দেরি করব না। এবার লিখেই ফেলি।এই লেখার শুরুতেই জানিয়ে রাখি, আমার লেখা কোন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নয়। আমি "রাজনীতি"র কিছুই বুঝি না। আমার পরিবারে কেউই সক্রিয় রাজনী্তির সাথে যুক্ত নন, তাই কোন রকম সরাসরি অভিজ্ঞতা আমার নেই। স্কুল এবং কলেজে চার বছর পলিটিক্যাল সায়েন্স পড়েছি বটে, কিন্তু খুব মন দিয়ে পড়েছি, বা সব বুঝে পড়েছি, এই কথা বললে ভুল বলা হবে। বহু প্রচারিত, বহু আলোচিত, বহু ব্যবহৃত কোন সামাজিক -রাষ্ট্রনৈতিক '-বাদ'/ -ইস্ম নিয়ে কোন রকমের তাত্বিক আলোচনা করার যোগ্য আমি নই। সৌভাগ্যবশতঃ আমি ছিলাম বেথুন কলেজের ছাত্রী, যেখানে, সরকারী কলেজ হওয়া সত্বেও ,সক্রিয় ছাত্র রাজনীতিকে কোন ভাবেই প্রশ্রয় দেওয়া হত না। ফলে, কলেজের নিজস্ব নিরাপদ নির্বাচন ছাড়া আর কিছু দেখিনি। তারপর এলাম যাদবপুরে। একদম উলটো চেহারার এক ক্যাম্পাস। দিকে দিকে পোস্টার এবং দেওয়াল লিখন, তাতে নানাধরনের বক্তব্য , যা অনেক সময়ে চেনাজানা পরিধির বাইরেও থাকত। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠনের নিজস্ব নির্বাচনের সময় এল। বেশ কিছু মিছিল হল। ক্লাসরুমে এসে বক্তৃতা হল দু পক্ষ বা তিন পক্ষ থেকেই। খুব কিছু মাথা ঘামাই নি। কাকে ভোট দিয়েছিলাম, কেন দিয়েছিলাম, আজ আর মনে নেই। আমি যে দুই বছর যাদবপুরে ছাত্রী ছিলাম, যে কোন কারণেই হোক, সেই দুইবছরে এমন কিছু সাড়া জাগানো ঘটনা আমার সামনে ঘটেনি , যা আমাকে রাজনৈতিকভাবে বিশেষ সচেতন করে দেবে, বা আমার মধ্যে কোন রাজনৈতিক মেরুকরণ করে দেবে। সার কথা হল, আমি একজন নিতান্তই নিজেকে-নিয়ে-ব্যস্ত-অতি-সাধারণ অরাজনৈতিক (ইংরেজিতে যাকে বলে apolitical) নাগরিক ছিলাম। এবং আছিও। তাই রাজনীতি নিয়ে গুরুগম্ভীর আলোচনা করার আমার কোন ইচ্ছা নেই। কিন্তু, ভারতবর্ষের তথা পশ্চিমবঙ্গের একজন স্বাভাবিক বোধবুদ্ধিসম্পন্ন সাধারণ নাগরিক হিসাবে কিছু কিছু প্রশ্ন , কিছু কথা তো মাথায় আসে। আসতেই থাকে। আর সেই সব সরল প্রশ্নের, বা ভাবনার উত্তর সবসময়ে মেলে না। সেই সব প্রশ্ন, কিছু ভাবনা নিয়েই আজকের এই লেখা।গত ১৩ই মে , ২০১১, পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট সরকারকে ৩৪ বছর পরে হারিয়ে নতুন সরকার তৈরি করল তৃনমূল কংগ্রেস। দেখতে গেলে, সদ্য পরাজিত বামফ্রন্ট সরকারের যা বয়স, আমার বয়স তার কাছাকাছিই -একটু বেশি। বলা যেতে পারে, দুজনের প্রায় সাথে সাথে বয়স বেড়েছে। তবে কিনা আঠেরো বছর পেরিয়েছি অনেকদিন। আর সৌভাগ্যবশতঃ, ভারতের সংবিধান আমাদেরকে নাগরিক হিসাবে বক্তব্য এবং চিন্তার স্বাধীনতা দিয়েছে। আর এই স্বাধীনতা ভারতের সব নাগরিকেরই আছে। এখন হয়েছে কি, গত ১৩ই মে এর পর থেকে আমার আশেপাশের নানা মানুষের নানা মতামত শুনছি। আমার আশপাশ বলতে শুধুমাত্র আমার পাড়া প্রতিবেশি নয়, আমাদের সবার ভারচুয়াল পাড়া ফেসবুকেও শুনছি, বলা ভাল পড়ছি। খুব স্বাভাবিকভাবেই কেউ কেউ উচ্ছ্বসিত, আবার কেউ কেউ খুবই দুঃখিত। যাঁরা উচ্ছ্বসিত, তাঁদের বক্তব্য মোটামুটি পরিষ্কার । তাঁরা বদল চান - নানা বিষয়ের , নানা ব্যবস্থার বদল। সেই নিয়ে বিস্তারিত আলোচনায় যাবনা। কিন্তু খুবই আশ্চর্যের বিষয় এই যে, যাঁরা দুঃখিত, তাঁদের মধ্যে অনেকেরই কিন্তু কোন সুস্পষ্ট ধারণা নেই, কেন তাঁরা দুঃখিত। মোটামুটি নানাজনের কথাবার্তা এবং মতামত শুনে বুঝতে পারলাম, প্রায় শৈশব বা কৈশোর, অথবা যৌবন থেকে দেখে আসা একটা অভ্যস্ত ব্যবস্থা বদলে যেতে চলেছে - অনেকের দুঃখটা সেখানে। অনেকের চিন্তা, এই অভ্যস্ত ব্যবস্থা বদলালে তাঁদের ঠিক কি কি অসুবিধা হতে পারে, সেই নিয়ে। অনেকে আবার দুঃখিত পালাবদলের যিনি নেতৃত্ব দিচ্ছেন, সেই বিশেষ মানুষটিকে নিয়ে - তাঁরা ঠিক মেনে নিতে পারছেন না তাঁদের মুখ্যমন্ত্রী অভিজাত পোষাক-পরিচ্ছদ না পরে, যথেষ্ট কেতাদুরস্ত না হয়ে নিতান্তই লোকাল ট্রেনের মহিলা কামরায় যাত্রা করা সাধারণ মহিলা যাত্রী মত ঘুরে বেড়াচ্ছেন, কেন তিনি টিভির পর্দায় মুড়ি খাচ্ছেন, এইসব সমস্যা নিয়ে। অনেকের মতে , এ আসলে এক ভয়ঙ্কর সময়ের পূর্বাভাস। কিন্তু সেই 'ভয়ঙ্কর' টা যে ঠিক কি, সেটা কেউই জানেন না। অনেকের ধারণা, এর পেছনে কাজ করছে কিছু অজানা শক্তির এক গভীর 'ষড়যন্ত্র' ।আর অনেকেই, পাশেরবাড়ির পরিচিত মানুষটি হা- হুতাশ করছেন, সেই দেখে মাথা কাত করছেন। যাঁদের কথা বললাম, তাঁরা কিন্তু বেশিরভাগই আমার মত অরাজনৈতিক নাগরিক। তাঁদের কোন বিশেষ 'বাদ' সম্পর্কে কোনই পরিষ্কার ধারনা নেই। যাঁদের নির্দেশিত পথে চলার চেষ্টা চালিয়েছে একটা ৩৪ বছরের শাসন ব্যবস্থা, সেই বিখ্যাত মানুষদের কাজ কর্ম এবং আদত ভাবনা চিন্তা সম্পর্কে এই সব মানুষের জ্ঞান ওই স্কুল-কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরীক্ষায় 'কমন' প্রশ্নের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।এত অবধি বলে মনে হল, না, একটা কথা মনে হয় একটু ভুল বললাম। কাজকর্ম, ভাবনা চিন্তা সম্পর্কে ধারণা থাক বা না থাক, সেই সব নামগুলির সঙ্গে কিন্তু পরিচিত অনেকেই। ভারতীয় বা বাঙালি না হলেও, কলকাতা শহরে তাঁদের প্রত্যেকের নামে একটি করে বিখ্যাত রাস্তা আছে। তা থাকতেই পারে। অনেক বিদেশি শহরেও শুনেছি বিখ্যাত ভারতীয়দের নামে এক-দুটো রাস্তা আছে। এই নামকরণের কথা যখন এল, তখন একটা কথা না বলে পারছি না। বেশ কিছুদিন আগে ভারতের অন্যান্য অনেক মহানগরীর মত, ক্যালকাটাও তার ঔপনিবেশিক নাম বদলে হয়ে গেল কলকাতা। তা হল বেশ হল। বম্বে যদি হয় মুম্বই, মাদ্রাজ হয় চেন্নাই, ব্যাঙ্গালোর হয় বেঙ্গালুরু, তাহলে ক্যালকাটাই বা কেন কলকাতা হবে না? তবে কিনা কথা হচ্ছিল কলকাতার রাস্তাঘাটের নাম নিয়ে। আরো সঠিক ভাবে বললে- নামকরণ/ নাম বদল নিয়ে। কলকাতা মহানগরের রাস্তাঘাটের মাঝে মাঝেই নাম পরিবর্তন আকছার ঘটনা। এবং সেই নামবদল যে সবসময়ে খুব সঠিক বা সার্থক এমনও নয়। একটা উদাহরণ দিতে পারি। সবার পরিচিত ক্যামাক স্ট্রিট - যে রাস্তা এক বিখ্যাত অফিসপাড়া, আর যে রাস্তার বাসিন্দাদের অধিকাংশই বাঙালী নন, বাংলা ভাষা-সাহিত্য সম্পর্কে যাঁদের জ্ঞানের পরিধি নিতান্তই সীমিত বা, নেই বললেই চলে। আপনি কি জানেন, ক্যামাক স্ট্রিটের কাগজে কলমে এখন নাম কি? - এই রাস্তার নাম হল অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর সরণি! কেন, কেউ বলতে পারেন? এরকম আরো ভুরি ভুরি উদাহরণ আছে। কেন হটাত করে গড়িয়াহাট রোডের কিছুটা অংশের নাম লীলা রায় সরণি? কেনই বা হাঙ্গারফোর্ড স্ট্রীটের নাম পিকাসো বীথি? এই নিয়ে কোন দিন কেউ প্রশ্ন তুলেছেন কিনা জানিনা। কিন্তু যখন একটা নতুন মেট্রো স্টেশনের নাম হল কবি নজরুল, কি শহীদ ক্ষুদিরাম, অথবা টালিগঞ্জ নাম পালটে হয়ে গেল মহানায়ক উত্তমকুমার, তখন সমালোচনার ঝড় বয়ে গেল চতুর্দিকে। কিছু মানুষ একচক্ষু হরিণের মত গোঁ ধরে ক্ষিপ্ত হয়ে গেলেন এহেন কাজকর্ম দেখে। আরে মশাই, নামকরণের , নাম বদলের ধারাটায় তো তাঁদের এতদিনে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়া উচিত ছিল, তাই না? আর তাও তো ভাল, যে টালিগঞ্জের নাম বদলে 'মহানায়ক উত্তমকুমার' এর বদলে 'সন কনোরি' বা 'হামফ্রে বোগার্ট' রাখা হয়নি !এটা নিতান্তই আমার ব্যক্তিগত মতামত , যে নতুন মেট্রো স্টেশনগুলিকে বিখ্যাত কবি-শিল্পী-বিপ্লবীদের নামে নামকরণ করে সাধারণ মানুষের মধ্যে একধরনের ইতিহাসচেতনা জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে মাত্র। আধুনিক বাঙালির তো এমনিতেই ইতিহাস-ভূগোল এবং বাংলায় অনীহা। তাদের সন্তানেরা সবাই ডাক্তার অথবা ইঞ্জিনিয়ার , নিদেনপক্ষে এম বি এ হবে, তাই পড়তে হবে শুধুমাত্র অঙ্ক, বিজ্ঞান আর ইংরেজি। নিতান্তই যদি এসব কিছুই না হয়, তাহলে হবে ক্রিকেটার। তার জন্য বাংলা না জানলেও চলে। আমাদের ছোটবেলাতেও আমরা ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম, বিশেষতঃ বাঙালি বিপ্লবীদের দুঃসাহসিক কাজকর্মের কথা অনেক পড়তাম। এখন মনে হয় আর কেউ সেসব পড়ে না। আমাদের ইতিহাসচেতনা খুবই দুর্বল। কিন্তু ঠিক যেমন একটা বাড়ির ভিত মজবুত না হলে সেই বাড়ি ঝড় ঝঞ্ঝার সামনে টিঁকতে পারে না, ঠিক সেইরকম , ইতিহাসচেতনা না থাকলে মানুষও পরিপূর্ন, দায়িত্ববান নাগরিক তৈরি হতে পারে না। 'শহীদ ক্ষুদিরাম' নামটা শুনে কারোর মনে যদি একবারের জন্যেও এই প্রশ্ন জেগে ওঠে- কে ক্ষুদিরাম, কেন তাঁর নামের আগে 'শহীদ' শব্দটা রয়েছে, তাহলেও হয়ত সেই মানুষটা সুনাগরিকত্বের পথে এক পা এগিয়ে গেলেও যেতে পারে - একথা ভাবতে আপত্তি কোথায়?একটু আগেই লিখেছি, আধুনিক বাঙালির বাংলাভাষার প্রতি প্রবল অনীহা। কেন, সে বিষয়ে নতুন করে আলোকপাত করার খুব একটা প্রয়োজন আছে বলে আর মনে হয়না। তাও বলি। হটাত করে একদিন সকালবেলায় কিছু শাসনকর্তাদের মনে হয়েছিল সরকারি শিক্ষাব্যবস্থার প্রাথমিক স্তর থেকে ইংরেজি ভাষাটাকে তুলে দেওয়া উচিত। তাই দেওয়া হল। ফল স্বরূপ কয়েকটি প্রজন্ম ভাল করে সেই ভাষাটাই শিখতে পারল না, যেটা ব্যবহার করে সারা দেশের অন্যান্য প্রান্তগুলির সাথে এবং বিদেশের সাথে সহজে সংযোগ এবং কথপোকথন চালানো যায়। তারপরে তারা নিজেরা বড় হল, বাবা-মা হল, হয়ে বুঝতে পারল তাদের ব্যবহারিক জীবনে এই ভাষাগত সমস্যাটা কতটা প্রবল। নিজেদের সমস্যার সম্মুখীন যাতে সন্তানেরা না হয়, তাই তারা হন্যে হয়ে তাদেরকে ভর্তি করতে চাইল ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে। দিকে দিকে বর্ষাকালের ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে উঠল 'নার্সারি' স্কুল এবং বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল। কিন্তু মুশকিল হল, এইসব বিদ্যালয়ে পড়াতে আসছে কারা? আসছে সেই সব প্রজন্ম , যারা নিজেরাই ভাল করে ইংরেজি জানে না। অতএব, আপাতত আরো কিছু নতুন প্রজন্ম তৈরি হচ্ছে, যারা না শিখছে সঠিক বাংলা, না শিখছে সঠিক ইংরেজি। এত সব কিছুর মধ্যে একটা কথা খুব জানতে ইচ্ছা করে । কয়েকটি উদাহরণ আমি জানি, কিন্তু কেউ যদি সময় করে একটি পূর্নাঙ্গ তালিকা তৈরি করেন, তাহলে আমি সত্যিই বাধিত হব। যাঁরা এই বিশেষ শিক্ষাব্যবস্থাটির প্রচলন করেছিলেন, তাঁদের নিজেদের বাড়ির ছেলে মেয়েরাও সবাই কি এইসব সরকারী স্কুল গুলিতে পড়াশোনা করেছিল? নাকি তাদেরকে ভর্তি করা হয়েছিল শহরের সেরা ইংরেজি মাধ্যম স্কুল গুলিতে? জানার খুব ইচ্ছা রইল।আমরা যারা বাংলায় ব্লগ লিখি, বাংলা ভাষার একটু আধটু চর্চা করি, তারা অনেকেই আক্ষেপ করি, এবং যথার্থ আক্ষেপ করি, যে বাংলাদেশের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গের বাংলায় ব্লগ লেখায় উতসাহী মানুষের সংখ্যা অনেক কম। কেন কম, তাই নিয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে বোধ হয়। রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন 'মাতৃভাষা মাতৃদুগ্ধের ন্যায়' । সেই মায়ের দুধের এহেন অবমাননার জন্য কাদেরকে দোষ দেব আজ?গত কয়েকদিনে অনেকের আবার খুব সমস্যা হয়েছে একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের রবীন্দ্রসঙ্গীত বাজানো নিয়ে। কেন কোন রাজনৈতিক দলের অফিস থেকে শোনা যাবে 'নাই নাই ভয়, হবে হবে জয়...' অথবা 'আকাশ ভরা সূর্য তারা , বিশ্বভরা প্রাণ...' । আমার কথা হল, শোনা গেলেই বা আপত্তি কোথায়? কোন বিজাতীয় ভাষায় তো গান হচ্ছে না। এমনকি , সেই গান গুলি বিশেষ কোন রাজনৈতিক বার্তাও বহন করছে না। আর আমি এটাও মনে করিনা রবীন্দ্রসঙ্গীত শোনার বা অনুধাবন করার জন্য বিশেষ কোন পরিমন্ডলের অন্তর্ভুক্ত হতে হবে। শিক্ষিত বাঙালি আনন্দে- শোকে- উতসবে- উদযাপনে, সবেতেই রবিঠাকুরের আশ্রয় নেন। রবীন্দ্রনাথের গান দলমত নির্বিশেষে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত বাঙালির সত্বার সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত । কিন্তু 'জন-গণ' তো আর শুধুমাত্র শিক্ষিত মধ্যবিত্ত বাঙালি দিয়ে তৈরি নয়। সেইসব মানুষদের যদি খানিকটা জোর করে হলেও , রবীন্দ্রসঙ্গীতের সাথে পরিচিত করা যায়, তাহলে ক্ষতি কি? তাঁদের যদি একটু হলেও বাঙলা সংস্কৃতির বটবৃক্ষটির ছায়ার শীতল আস্বাদ দেওয়া যায়, তাতেই বা আপত্তি কোথায়? গান গেয়ে যে মানুষকে একই ধরণের ভাবনা চিন্তায় অনুপ্রাণিত করা যায়, তার নিদর্শন তো স্বয়ং রবীন্দ্রনাথই রেখেছেন , বংগভঙ্গের সময়ে 'বাংলার মাটি, বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, পূণ্য হউক...' গানটি লিখে । সেটা কিন্তু এক ধরণের রাজনৈতিক প্রতিবাদই ছিল । আর যদি গত কয়েক দশকের ইতিহাসের কথা ধরি, তাহলে আমাদের ছোটবেলা তো কেটেছে 'গণসঙ্গীত' শুনে আর ভালবেসে। 'জন হেনরির ছিল হাতে হাতুড়ি...', 'ওরা জীবনের গান গাইতে দেয়না, শিল্পী সংগ্রামী পল রোবসন...', 'আমরা করব জয়...' ' হেই সামালো ধান হো, কাস্তে তে দাও শান গো...' 'এই দেশ, এই দেশ, আমার এই দেশ...' -এইসব গান শুনে। প্রখর মে থেকে হৈমন্তী অক্টোবর ছাড়িয়ে আমার ছোটবেলার প্রান্তিক শিল্পনগরীর আনাচে কানাচে ভেসে বেড়াত এই গান গুলি। ছোট থেকে বড় হয়ে ওঠার বেলায় এই গান গুলি শুনে শুনে প্রায় মুখস্থ হয়ে গেছিল। এক অদ্ভূত উদ্দীপনা বোধ করতাম ভেতর ভেতর। চোখে জল ভরে আসত, বুকের ভেতরটা উত্তেজনায় দ্রিমি দ্রিমি বেজে উঠত শুনে -'পথে এবার নামো সাথী পথে হবে এপথ চেনা...'। আজকাল আর কোথাও এই গান গুলি শুনি না। কেন শোনা যায়না এই গান গুলি? যাঁরা তখন এই গান গুলি নিয়মিত গাইতেন, বাজিয়ে শুনতেন, আজকাল আর এই গানগুলি গান বা শোনেন না হয়ত...প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে গেছে কি?আরো কিছু বিষয়ে কিছু ভাবনা/ প্রশ্ন ছিল, কিন্তু ব্লগ পোস্টের তুলনায় এই লেখা যথেষ্ট বড় হয়ে গেছে। তাই এখন এইটুকুই থাক। তর্ক-বিতর্ক-আলোচনা -সমালোচনা যেকোন সুস্থ সমাজের লক্ষণ। তাই আলোচনা- সমালোচনা চলতে থাকুক। কিন্তু সেগুলি গঠন মূলক হলে আর একপেশে না হলেই ভাল। হাতের পাঁচটা আঙুল সমান নয়। কিন্তু তাদের সবগুলির সমন্বয়েই আমরা কোন একটা কাজ গুছিয়ে করতে পারি। আর দুটো হাতই যদি ব্যাবহার করতে পারি, তাহলে তো কাজ করতে আরো সুবিধা হয় - সে মোট বওয়াই হোক, ক্ষেত হাল চষাই হোক, মেশিন চালানোই হোক, রিকশা টানাই হোক, তাঁত বোনাই হোক, বই পড়াই হোক, বা কম্পিউটার এর কিবোর্ড টেপাই হোক। একটা বহুল প্রচলিত ধাঁধার ছড়া দিয়েই তাই আমার বক্তব্য শেষ করতে চাই। বলা যেতে পারে, এই ছড়াটি আমার এই সম্পূর্ণ পোস্টটির সংক্ষিপ্তসার।
পাঁচ ভাই, এক সাথ
মারছে ঘুঁষি, খাচ্ছে ভাত
আরো পাঁচ সঙ্গে তার
কেমন আছেন? নমস্কার।
কেমন আছেন? নমস্কার।
- Details